বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

পর্ব ৩ - জিআরই

এমন এক পরীক্ষা, যেটা দুইবার দেওয়া বিসিএস দুইবার দেওয়ার চেয়ে কম কিছু না। কাজেই, যদি জিআরই দিতে চান, তাহলে এটাকেই ডু অর ডাই ফোকাসে রাখতে হবে। দিয়া দেখি কি হয় টাইপের মানসিকতা নিয়ে দিলে প্রচুর অর্থ আর মূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু হবেনা।

খেয়াল করা দরকার যে জিআরই আসলে কী পরীক্ষা করে। সিলেবাসের ম্যাথগুলো হাইস্কুল লেভেলের, আর এমন ইংলিশ আসে, যেইটা দিয়া জীবনেও কেউ কথাবার্তা বলেনা, চমস্কি লেভেলের ইন্টেলেকচুয়ালরা ছাড়া। তাহলে, অনার্স পাশ করা একজনকে এই প্রশ্ন করে লাভ কী? আমার ধারণা, জিআরই আসলে ইচ্ছাশক্তির পরীক্ষা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এটি যারা দিচ্ছে, তারা হয়ত মাস্টার্স করছে, অথবা চাকুরী করছে বা খুঁজছে। যেভাবেই হোক, জিআরই তাদের জন্য আসে একটি অতিরিক্ত কাজ হিশেবে। মূল কাজের বাইরে এই আলতু-ফালতু প্রশ্নের পরীক্ষার প্রস্তুতি সিরিয়াসলি নিতে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং স্বপ্রণোদনার প্রয়োজন। জিআরই ঠিক সেইটারই পরীক্ষা।

এর ফরম্যাট সম্পর্কে গভীর এবং বিস্তারিত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এখানে সেটা বলা অপ্রয়োজনীয়। আমার ক্ষেত্রে যেসব জিনিস ভালো কাজে লেগেছে সেইগুলো বলি।

ম্যাথঃ
প্রস্তুতির সময় দেখা যায় ম্যাথগুলো এত সহজ, যে তেমন প্র্যাকটিসেরই দরকার নাই। এটা মারাত্নক ভূল। আমি এর ভুক্তভোগী। ওখানে ৩৫ মিনিটে ২০ টি করে ৭০ মিনিটে ৪০ টি ম্যাথ অ্যান্সার করতে হবে। প্রতিটির জন্য সময় ১.৭৫ মিনিট। প্র্যাকটিস এর সময় এটাই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনমতেই কোন অঙ্কে এর চেয়ে বেশী সময় না লাগে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, পরীক্ষার সময় অন-স্ক্রীন ক্যালকুলেটর থাকবে, তাই প্র্যাকটিস এর সময় সেটা ব্যবহার করা ভাল এবং উচিৎ। টার্গেট করা উচিৎ কমপক্ষে ১৬৫+ রাখার। তবে ১৭০ রাখা খুবই সম্ভব।
অনেক বই আছে জিআরই ম্যাথের, আমি ম্যানহাটান ১-৬, ৫ পাউন্ড, নোভা, ব্যারনস, মাগুশ আর ইটিএস অফিশিয়াল পড়েছিলাম। এছাড়া কাপলান, প্রিন্সটন রিভিউ ও ভালো।

ভার্বালঃ
এটা যতটা কঠিন মনে হয়, আসলে ততটা না। প্রধান সমস্যা প্র্যাক্টিসের অভাব। আর প্রচুর ওয়ার্ড মুখস্ত করলেই ভার্বাল প্রস্তুতি ভালো হয়ে যাবে সেটা চিন্তা করাও ভূল। ওয়ার্ড জানা ভার্বাল প্রস্তুতির পূর্বপ্রস্তুতি মাত্র। আর এটা চলমান প্রক্রিয়া। একসাথে সব ওয়ার্ড মুখস্ত করে তারপর জোরেশোরে ভার্বাল পড়ার চিন্তা করা উচিৎ নয়। মোটামুটি ১০০০ ওয়ার্ড শেষ করেই ভার্বাল শুরু করা উচিৎ এবং এই টার্গেটে যে, শেষ পর্যন্ত অন্তত ৩০০০ ওয়ার্ড যাতে আয়ত্তে থাকে। মিনিমাম ১৫৫+ রাখার টার্গেট করতে হবে।

এছাড়া কিছু নিউজপেপার খুব হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল লেখে যেগুলো জিআরই রিডিং কম্প্রিহেনশনের মতো এবং পড়া খুবই জরুরী। যেমনঃ
1. aldaily.com
2. nytimes.com
3. scientificamerican.com
4. smithsonianmag.com
5. newyorker.com
6. harvardmagazine.com
7. theatlantic.com
আমি এগুলোর দুয়েকটি করে আর্টিকেল নিয়মিত পড়তাম, প্রচুর অজানা শব্দ আসতো, সেগুলোকে আবার quizlet.com এ পার্সোনাল ডিকশনারীতে তুলে রাখতাম। ভার্বাল বইগুলো থেকেও অজানা বা কঠিন শব্দগুলোকে এখানে রেখে দিতাম। পরে বাসে জ্যাম এ বসে বসে দেখা যেত।

প্রতি প্রশ্নে গড় সময় ১.৫ মিনিট। লং প্যাসেজ শুধু পড়তেই অন্তত ৪ মিনিট লাগে। কাজেই পুরো পড়ে অ্যান্সার করা অসম্ভব। তাই প্রথমে দু-তিন লাইন পড়েই প্রশ্নে চলে যাওয়া উচিৎ। এরপর প্রশ্ন পড়ে উত্তরগুলো না পড়ে আবার প্যাসেজে এসে উত্তর খুঁজতে হবে। যেটা উত্তর মনে হবে সেটা আবার মাল্টিপল চয়েস এর সাথে মেলাতে হবে। যদি পুরোপুরি মিলে যায় তাহলে ওটাই উত্তর। না মিললে আবার প্রশ্ন পড়ে প্যাসেজে ফিরে উত্তর খুঁজে চয়েস এর সাথে মেলাতে হবে। এটা বেশ কার্যকরী একটা পদ্ধতি। বই হিশেবে ম্যানহাটান ৭-৮, ৫ পাউণ্ড, মাগুশ, ব্যারনস, ওয়ার্ড স্মার্ট আর ইটিএস অফিশিয়াল পড়েছিলাম। তাছাড়া memrise.com এ দুটি জিআরই ওয়ার্ডলিস্ট শেষ করেছিলাম। সাইটটা ভালো। ভার্বাল এর একটাই ফ্যাক্টর, প্রচুর প্রচুর প্রচুর প্রচুর প্র্যাকটিস।

অ্যানালিটিকাল রাইটিংঃ
সচরাচর অবহেলিত এই সেকশনটাতে অনেক বেশী নজর দিতে হবে। ইস্যু আর আর্গুমেন্ট অ্যানালাইসিসের অন্তত ১৫ টি করে টপিক লিখে প্র্যাকটিস করতে হবে। টাইপিং স্পীড ভালো থাকা বিশাল প্লাস পয়েন্ট। এছাড়া এইটার প্র্যাক্টিসের মধ্য দিয়ে ভার্বাল প্র্যাকটিসও হয়ে যায়। একটি ইস্যু বা আরগুমেন্ট অ্যানালাইসিস লিখে সেটাতে সাধারণ ওয়ার্ডগুলো জিআরই ওয়ার্ড দিয়ে রিপ্লেস করা একটি ভালো পদ্ধতি। গুগল ডিকশনারী অ্যাডঅন ব্যবহার করা ভাল। একটি ভালো রাইটিং স্কোর অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজে যথেষ্ট পজিটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলে।

 আর অন্য কিছু না করে জিআরই পড়লে ৩ মাস যথেষ্ট। চাকুরীর পাশাপাশি করলে ৪/৫ মাস হাড়ভাঙা খাটুনি করা লাগে। মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস টেস্ট দিলে প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা হয়। আর ইটিএস খুবই স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে প্রশ্ন করে। স্কোর বাড়ে ক্রমান্বয়ে। প্র্যাকটিসে স্কোর একবার ৩১০ আসলে পরের টেস্টে হঠাৎ ৩০০ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রায় ৪ ঘন্টার এই পরীক্ষা ধৈর্য্যের শেষ সীমা দেখিয়ে ছাড়ে। তাই দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখার প্র্যাকটিস করুন। আর এক্সাম শেষ হবার সাথে সাথেই ভার্বাল আর কোয়ান্টের স্কোর পেয়ে যাবেন। যেহেতু ৪ টি ইউনিভার্সিটিতে স্কোর ফ্রী পাঠানো যায়, তাই আগে থেকে কত স্কোর হলে কোথায় কোথায় পাঠাবেন ঠিক করে যেতে পারলে ভালো। নইলে পরে সেই অতগুলো ডলার দিয়ে আবার পাঠাতে হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন