বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

পর্ব ১ - নিঃস্বার্থ উচ্চশিক্ষা, What is Sacrifice?

অনার্স কমপ্লিট, মাস্টার্স করমুনা। পড়াশুনা শেষ। এইবার চাকরীর জন্য দৌড়। আর যদি আগে মনে হয় যে মাস্টার্স/এমবিএ করলে আরেকটু ভালো চাকরী পাওয়া যাবে তাহলে তাই সই। অতঃপর ভালো-মন্দ একটা চাকরী পেয়ে মিষ্টি বিলিয়ে, বিয়ে করে, মা-বাবা, দাদা-দাদী হয়ে আজিমপুর বা বনানী। শেষ। ৬০ বছরের জীবনে এইটুকুই অনেক। কী লাভ জ্ঞানের পেছনে দৌড়ে? ছোটবেলায় কত কিছুই তো জানতে, দেখতে, বুঝতে ইচ্ছা করত। এখন বড় হইছি, এইসব জ্ঞান-টান দিয়ে যে কোন লাভ নাই সেটা বোঝার মত বুদ্ধি হইছে।

এই হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা। কোথায় যেন পড়েছিলাম যে "Life is too short not to take risks". নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট একটি জীবন কে না চায়। কিন্তু ওইটুকু রিস্ক নেওয়া, আরেকটু দুরে যাওয়া, একটি নতুন দেশ দেখা, একটি নতুন জিনিস জানা, এমনকি একটা কিছু আবিষ্কার করা, খারাপ কিছু কি? একটাই তো জীবন, একটু ভিন্ন নাহয় হলই, মহাভারত অবিকৃতই থাকবে।

এইসব দার্শনিক আলাপ বাদ দিলাম। উচ্চশিক্ষার পেছনে ছুটলে বাস্তব জীবনে ফায়দা কতটুকু? দেশে চাকুরীর বাজার খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। বিসিএস নাটকে কোটা নামের হাস্যরস, বছরের পর বছর প্রস্তুতি নেওয়া ছেলেদের কাছে তিক্ত লাগে। এফএইচ হলে থাকতে ভাইদের দেখেছি, দুই-তিন বছর টানা প্রস্তুতির পর ভাইভাতে বাদ পরে আবার দেড় বছরের ফ্যাকড়ায় পড়ে যেতে, ব্যাঙ্কগুলোতে অনেক কষ্ট করেও হাস্যকর বেতনে ঢুকতে।
আইটি/সিএস এর ছাত্রদের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে একটু ভালো। এখানে চাকরি পাওয়া, পরিবর্তন, বেতনাদি সামান্য ভালো। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কয়েক বছর যাওয়ার পর এখানে উন্নতির সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। বেতন অত বাড়েনা, বুড়ো বয়সেও সারাদিন প্রেশারে কাজ করা লাগে, আর কোম্পানি খারাপ হলে তো কথাই নেই। পেনশনবিহীন, অনিরাপদ বেসরকারী চাকুরীতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা এবং মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া দুটোই কষ্টকর।

হুমায়ুন আজাদের মতে, বাংলাদেশে বেতন কাঠামো একটি রসিকতা মাত্র, এখানে ৩০ দিন কাজ করিয়ে ৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়। ঢাকায় বাসা ভাড়া, যাতায়াত, খাওয়া-খরচ চিকিৎসা, পড়াশুনা আর অতিরিক্ত খরচ হিশেবে নিলে মাস শেষে যদি রাখা যায়ও, খুব বেশী থাকেনা মাটির ব্যাঙ্কে রাখার মতো। সদ্য পাশ করে এইসব চাকুরী ভালোই লাগে, পরে পরিবারের আর নিজের ভবিষ্যতের হিশেব আসতে থাকলে প্রাথমিক অনুভূতিটা আর থাকেনা।

এর বিকল্প হিশেবে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশগমনের প্রশ্ন আসার যোগ্য। যদিও দেড় বছর খাওয়া-ঘুম হারাম করে স্কলারশীপের পর পরিবার-বন্ধুদের ছেড়ে আবার দুই বা পাঁচ বছর বা হয়ত আজীবনের জন্যই ভিনদেশে পড়ে থাকা সুখের কিছু না, তবু নিজের এবং পরিবারের একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় কয়েক বছরের আত্মত্যাগ করা যায়। দেশে এরকম উচ্চশিক্ষিত যুবকরা থাকলে দেশের চেহারাও পালটে যাবে। অনেক বছর পর হয়ত আর এভাবে বাইরেও যাওয়া লাগবে না, আশা করি তখন বাইরে থেকে উচ্চশিক্ষার্থে আমাদের দেশে লোকজন আসবে। ততদিন আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন