রবিবার, ১০ মে, ২০১৫

পর্ব ৫ - স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) / রিসার্চ প্রোপোজাল/ পার্সোনাল স্টেটমেন্ট

কোথাও শুনেছি এটি অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আবার কোথাও উল্টোও শুনেছি। যাই হোক, আমার মতে প্রথমটাই সঠিক। অ্যাডমিশন কমিটির কাছে, এটাই আপনার চিন্তাভাবনার প্রতিচ্ছবি। অন্যান্য এক্সাম স্কোর এর নাম্বারগুলো আপনাকে যতটা প্রকাশ করবে, এই একটি লেখা তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশী প্রকাশ করবে। মনে রাখবেন, আপনার SOP দুনিয়ার ইতিহাসে এক পীসই লেখা হবে। এটিই বাদশাহের কাছে বলা আপনার আরব্য রজনীর গল্প। খারাপ হলে আপনি শ্যাষ।

অন্তত দুইমাস সময় হাতে নিয়ে শুরু করুন এটি লেখা। দয়া করে কারো কাছে থেকে কপি করবেন না। ইন্টারনেট ঘাটলে কোটিখানেক লিঙ্ক পাওয়া যাবে SOP লেখার পরামর্শ নিয়ে। আমি উপকার পেয়েছিলাম এমন কিছু লিঙ্ক নিচে দেইঃ 


এটাকে কোনভাবেই হাল্কাভাবে নেবেন না। অল্প সময়ে লেখার কথা ভূলেও মাথায় আনবেন না। উপরের লিঙ্কগুলো থেকে এটা কী, কেন, কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নিন। প্রচুর ঘাটাঘাটি করুন। পরিকল্পনা করুন। আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট ঠিক করুন। আউটলাইন লিখুন। কি কি বিষয় আপনি জানেন রিসার্চ টপিকে, সেগুলো পয়েন্ট আউট করুন। আপনার অতীত কীভাবে আপনাকে এই ফিল্ডে এনেছে সেটা কল্পনা করুন। "ছুডকাল থিকাই আমি মেশিন লার্নিং এর স্বপণ দেখি" টাইপের বক্তব্য পরিহার করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে স্বপ্ন, আশা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরণের ছেলেমানুষী বক্তব্য না থাকে, ম্যাচিউরিটি দেখান। থাকবে আপনার লজিকাল চিন্তাভাবনা, প্রকাশ পাবে আপনার লেগে থাকার অমানুষিক ক্ষমতা। কোন লাইনে যদি কোন ক্লেইম থাকে তার স্বপক্ষে এভিডেন্স দিন। রিসার্চ লাইনের প্রোফেসরদের বর্তমান কাজ সম্পর্কে ধারণা নিন। আপনার রিসার্চ কীভাবে এই ফিল্ডে অবদান রাখবে লক্ষ্য করুন। 


বারবার এডিট করুন। প্রচুর জিআরই শব্দ ঢুকিয়ে, জবরজং সেন্টেন্স বানিয়ে 'পার্ট' নেওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। ওই শব্দগুলো যে আপনি জানেন, সেটা অ্যাডমিশন কমিটিও জানে। সেজন্যই আপনি জিআরই ভার্বাল দিয়েছেন। এখানে সেটা পরিহার করুন। কল্পনা করুন, আপনি অ্যাডমিশন কমিটির সদস্য। কয়েক হাজার অ্যাপ্লিকেশনের কয়েক হাজার SOP আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যে রিভিও করতে হবে, এর মধ্যে যদি আকর্ষণীয় একটি গল্পের বদলে জিআরই ভার্বাল থাকে, আপনার কেমন লাগবে? 

এর কোন নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই। তবে মোটামুটি যেসব বিষয় থাকে সেগুলো ওই লিঙ্কগুলো ঘাটলেই পেয়ে যাবেন। মোটামুটি খসড়া বানিয়ে ফেলে ৪/৫ দিন পর পর এডিট করুন, আস্তে আস্তে একটা চেহারা দাঁড়িয়ে যাবে। এটা মোটেও সহজ কাজ না। যদি আপনার কাছে সহজ মনে হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার SOP ভালো কিছু হচ্ছেনা। এই জিনিসটা লেখার মধ্যে এতো বেশী "ডু'স এন্ড ডোন্ট'স" আছে যে আপনি একসময় হতাশ হয়ে যাবেন এবং 'ধুত্তুরি' বলে ফেসবুকে ঢুকে পড়বেন। তখন আসলে আপনি সঠিক পথেই আছেন। শুধু আবার ওটাকে বের করে এডিট করতে ভুলবেন না। 

কোথাও কোথাও এমন কথাও শুনবেন যে, তুমি যদি একটি SOP না লিখতে পারো তাহলে তোমার PhD করারই দরকার নেই। হতাশ হবেন না, আপনি একটি ভালো SOP লেখার পর এত অহমিকা অনুভব করবেন যে আপনার কাছে ওই বক্তব্য সঠিকই মনে হবে। 

SOP র একটা পার্টে লিখতে হয় ওই ইউনিভার্সিটি আপনি কেন সিলেক্ট করেছেন। সেখানে গণহারে ক্যাম্পাসের সবুজ-শ্যামলিমার কথা না বলে ভার্সিটি সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ-খবর নিন। একেবারে ডিপার্টমেন্টের সাইটে গিয়ে, প্রজেক্ট ডিটেইলস এ গিয়ে তাদের অ্যাক্টিভিটি পড়ে আসুন। সেটার একদম স্পেসিফিকালি কোন জায়গাটি আপনার আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এবং আপনার সেখানে অবদান রাখার কী সুযোগ রয়েছে সেটা তুলে ধরুণ। যে প্রফেসর এর নাম পটেনশিয়াল অ্যাডভাইজর হিশেবে দেবেন, তাদের ব্যক্তিগত সাইটে যান। কাজকর্ম দেখুন, আপনার ইন্টারেস্ট এর সাথে ম্যাচ করে এমন কিছু প্রোজেক্ট খুঁজে বের করুন। এরপর তাদের নামোল্লেখের সময় ওই প্রোজেক্টগুলোর কথাও উল্লেখ করে দিতে পারেন। মূলকথা হচ্ছে, আপনি যে এই ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে আসলেই ইন্টারেস্টেড এবং যথেষ্ট ঘাটাঘাটি করেছেন সেটা অ্যাডমিশন কমিটিকে বোঝান। 

সর্বোপরি, যতভাবে আপনার SOP সুন্দর করা সম্ভব বলে মনে হয়, ততভাবেই চেষ্টা করুন। লেখা শেষ হলে টিচারদের বা অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে রিভিও করে নিতে পারেন, তাদের সাজেশন মূল্যবান। অন্যের চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়বে যেটা আপনার চোখে নাও পড়তে পারে। গ্রামারে যাতে তিলমাত্র ভুল না থাকে। 

কোন কিছুই কখনো পারফেক্ট হয় না। SOP যাতে এর কাছাকাছির চেয়েও বেশী হয়। বাকীটা মহান অ্যাডমিশন কমিটির হাতে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন