রবিবার, ১০ মে, ২০১৫

All Links

পর্ব ২ - প্রোফাইল এবং টাইমলাইন

প্রোফাইলঃ

বাইরে অ্যাপ্লাই করতে প্রোফাইল বলতে যা বোঝায়ঃ
১। সিজিপিএ
২। পাবলিকেশন
৩। ক্লাস র‍্যাঙ্ক
৪। জিআরই
৫। টোফেল
৬। স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP)
৭। রেকমেন্ডেশন
৮। কো আর এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ (প্রোজেক্ট, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, কন্টেস্ট, ক্লাব, হবি, সোশ্যাল ওয়ার্কস ইত্যাদি)


এই সবগুলো পয়েন্টে ভালো করতে পারলে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যাওয়া সম্ভব। যেহেতু সবগুলোতেই ভালো করা প্রায় অমানুষদের কাজ, তাই কিছু জায়গায় দুর্বলতা থাকলেও সমস্যা নেই। অন্য কোন একটা দিয়ে পূরণ করে দেওয়া যায়। সিজিপিএ ৩.৭/৩.৮ হলে সবচেয়ে ভালো, কম (৩ এর সামান্য নীচে) হলেও সমস্যা নেই, ইউএসএ তে এই রেঞ্জেও ভার্সিটি আছে। ব্যাকলগ থাকা উচিৎ নয়। পাবলিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই ছাত্র অবস্থায় ভাল পেপার নামের সাথে থাকলে এইখানে অনেক এগিয়ে থাকা যায়। তবে পাবলিকেশন না থাকলে প্লাস পয়েন্ট না হলেও মাইনাস পয়েন্ট না। এরপর আসা যায় ক্লাস র‍্যাঙ্ক এর কথায়। যদিও আপনার ক্লাস র‍্যাঙ্ক কত এটা অ্যাপ্লিকেশন এর কোথাও জিজ্ঞেস করবে না, কিন্ত SOP তে যদি লেখেন যে আপনি ক্লাস এর ফার্স্ট/সেকেন্ড বা ভালো একটা পজিশনধারী, সেটা অবশ্যই আলাদা ভ্যালু পাবে। তবে বেশী খারাপ হলে লেখার দরকার নেই, সমস্যাও নেই।  জিআরই তে সায়েন্সএর লাইনে ম্যাথ এ ১৬৫+ থাকা খুবই ভালো, ১৬০ এর আশেপাশেও সমস্যা নেই, বেশী নীচে থাকলে সমস্যা। ভার্বালে ১৫০+ থাকলেই যথেষ্ট, ১৬০ এর আশেপাশে থাকলে বিশাল লাভ। আর অ্যানালিটিকাল রাইটিং এ মিনিমাম ৩.৫ থাকা বাঞ্ছনীয়। টোফেল এ সর্বমোট স্কোর ১০০+ রাখলেই যথেষ্ট, খুব বেশী কম যাতে না হয়। SOP অনেক খেটেখুটে লিখতে হয়। রেকমেন্ডেশন ভালো পাওয়ার জন্য স্যারদের কথা মতো চলা আবশ্যক। যদিও স্যাররা প্রয়োজনের চেয়েও বেশী সাহায্য করেন। আর অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিজ যেগুলো রিসার্চ লাইনের সাথে যায় এবং ব্যক্তি হিশেবে আপনার মূল্য বাড়ায় সেগুলো কয়েকটি করা ভালো।

এখানে ধরে নিচ্ছি যে পাশ করার সাথে সাথে আপনি অ্যাপ্লাই করছেন। যদি জব করে থাকেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে নিজ ডিপার্টমেন্টের টিচার হতে পারলে, অথবা অন্য কোন জায়গায়। এছাড়া জব যত রিসার্চ লাইনের কাছাকাছি হয় তত ভালো।

টাইমলাইনঃ

জুন/জুলাই বা দেরী হলে আগস্টে এর মধ্যে জিআরই স্কোর আর আগস্ট/সেপ্টেম্বর বা দেরীতে অক্টোবর এর মধ্যে টোফেল স্কোর হাতে থাকা সবচেয়ে ভালো। তবে খুব বেশী দেরী হিশেবে নভেম্বর এর কিছুদিনে যাওয়া যায়, কিন্ত সেটা খুবই খারাপ। অনেকগুলো ডেডলাইন মিস হয়ে যাবে। এরপর নভেম্বর বা ডিসেম্বরে অ্যাপ্লিকেশন শেষ করতে হবে। খুব দেরী হলে জানুয়ারী। তারপর ২/৩ মাস রেজাল্টএর জন্য বসে থাকা। রেজাল্ট জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী/মার্চেই চলে আসে বেশীরভাগ, দেরী হলে এপ্রিল এও আসতে পারে। এর মধ্যে পছন্দের ভার্সিটি পেয়ে গেলে অ্যাক্সেপ্ট করে ফেলা, এপ্রিল/মে তে ভিসা নিয়ে নেয়া অতঃপর জুলাই/আগস্টে চলে যাওয়া। এই হচ্ছে মোটামুটি হিশেব।  

পর্ব ৭ - অ্যাপ্লাই করা

আপনার কাছে যেসব ডকুমেন্ট রেডি থাকতে হবেঃ

১। অফিশিয়াল ডিগ্রী সার্টিফিকেট (রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে ইস্যু করা, সত্যায়িত রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকেই)
২। অফিশিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট (রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে ইস্যু করা, সত্যায়িত রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকেই)
৩। স্যারদের রেকমেন্ডেশন লেটার (অন্তত তিনটি)
৪। স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (ভার্সিটি অনুযায়ী ভিন্ন হবে)
৫। জব করে থাকলে এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট, NOC লেটার
৬। মার্কশীট
৭। অ্যাকাডেমিক CV
৮। পাসপোর্ট সাইজ ছবি
৯। ন্যাশনাল আইডি কার্ড
১০। পাসপোর্ট
১১। ভিসা-মাস্টার-অ্যামেক্স কার্ড
১২। অফিশিয়াল সীলড এনভেলাপ (রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে) 

এই সবগুলো(১১, ১২ বাদে) ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পিডিএফ বানিয়ে সুন্দর করে গুগল ড্রাইভে রেখে দিন। এছাড়া ভার্সিটি স্পেসিফিক যদি কোন রিকোয়ারমেন্ট থাকে সেটাও খেয়াল রাখবেন। ডিগ্রী সার্টিফিকেট আর ট্রান্সক্রিপ্ট যতগুলো ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করবেন তার চেয়ে দুয়েক কপি বেশী তুলুন। রেকমেন্ডেশন লেটার সবচেয়ে ভালো হয় আপনার থিসিস অ্যাডভাইজর এর কাছে থেকে নিলে, এছাড়া সিনিয়র প্রফেসর, ক্লাস টিচারদের কাছে থেকেও নিতে পারেন। যে বিষয়ে অ্যাপ্লাই করবেন, সেই বিষয়টির ক্লাস যে স্যার নিয়েছিলেন তাঁর কাছে থেকেও নিতে পারেন। আর সবাই যদি আপনার সম্পর্কে দুটো ভালো কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন, তাহলে জব করে থাকলে আপনার সুপারভাইজর এর কাছে থেকেও নিতে পারেন। এর বাইরে অপরিচিত কারো কাছে থেকে নিতে পারেন, কিন্ত সেটা কতটা ইফেক্টিভ হবে আপনিই ভেবে নিন। তবে এখন পেপার রেকমেন্ডেশনের যুগ প্রায় চলে গেছে। এখন অ্যাপ্লাই করতে গেলে আপনার কাছে আপনার রেকমেন্ডার এর ইমেইল অ্যাড্রেস চাইবে। আপনি দেওয়ামাত্র তাঁর কাছে ইমেইল চলে যাবে আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন সহ। তিনি ইমেইল এর যে রিপ্লাই দেবেন সেটা আপনি দেখার অধিকার রাখেন যদি আপনি ওই ইউনিতে চান্স পান। তবে সেই অধিকার ছেড়ে দেওয়াই ভালো (এর অপশন দেওয়া থাকবে)। কারণ নইলে আপনার সম্পর্কে অ্যাডমিশন কমিটি ভাববে যে আপনি আপনার রেকমেন্ডারদের বিশ্বাস করেন না।

এরপর নামুন তথ্য সংগ্রহ অভিযানে। প্রতিটি ইউনির নিম্নোক্ত তথ্যাবলী যোগাড় করবেন।
১। প্রায়োরিটি ডেডলাইন
২।  অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটগুলো ( ডকুমেন্ট পাঠানোর শেষ তারিখ, জিআরই-টোফেল পাঠানোর শেষ তারিখ)
৩। ডকুমেন্ট পাঠানোর ঠিকানা
৪। জিআরই+টোফেল সেন্ড করার কোড
৫। কি কি ডকুমেন্ট চায় + অনলাইন নাকি পেপার কপি
৬। রেকমেন্ডেশন লেটার কীভাবে চায়, অনলাইনে নাকি পেপার কপি
৭। অ্যাপ্লিকেশন ফী
৮। কোন স্পেশাল ইন্সট্রাকশন আছে কিনা

গুগোল ড্রাইভে প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটির জন্য আলাদা ফোল্ডার বানিয়ে রাখতে পারেন। নইলে ম্যানেজ করা মুশকিল হয়ে যায়।

এরপর জিআরই-টোফেল স্কোর আগেই না পাঠিয়ে থাকলে পাঠিয়ে দিন, শুরু করে দিন অ্যাপ্লিকেশন। প্রত্যেকটাতেই শুদ্ধভাবে শেষ করতে সময় লাগবে, স্যাররা রেকমেন্ডেশন মেইল পেলেন কিনা খোঁজ নেবেন, রিপ্লাই দিয়েছেন কিনা আপনার অ্যাপ্লিকেশন পোর্টালে চেক করবেন। দেরী হলে স্যারদের আবার নক দিয়ে মনে করিয়ে দেবেন।

কিছু ভার্সিটি আগেই ফাইনান্সিয়াল ক্যাপাবিলিটির এভিডেন্স চায়, তাদের মেইল করে জিজ্ঞেস করবেন এটা অ্যাডমিশন পাওয়ার পরে সাবমিট করলে হবে কিনা। কারণ পরে আপনি অ্যাসিস্টান্টশিপ পেয়ে গেলে এটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

অ্যাপ্লিকেশন এর সমস্ত কাজকর্ম নভেম্বার বা ম্যাক্সিমাম ডিসেম্বের এর মধ্যে শেষ করে ফেলবেন। মাঝে মাঝেই অ্যাপ্লিকেশন পোর্টালগুলো চেক করবেন। পরের ৩ মাস ভাগ্যের খেলা দেখার জন্য টিকেট কেটে বসে যাবেন। শুভকামনা!

পর্ব ৬ - ইউনিভার্সিটি সিলেকশন

এটি খুবই সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। পছন্দমত ভার্সিটি প্রোফাইলের সাথে ম্যাচ করে খুঁজে পাওয়া অনেক নির্ঘুম রাতের কাজ। যেনতেন প্রকারে সিলেক্ট করলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। মনে রাখবেন প্রতিটি ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতে মোটামুটি ১০ হাজার টাকার মতো লাগবে। কাজেই উলটাপালটা অ্যাপ্লাই করে টাকা নষ্ট করবেন কিনা ভেবে নিবেন। 

ভার্সিটি সিলেকশন এর দুইটি পদ্ধতি আছে, ১। প্রোফেসর দের মেইল করে, রিপ্লাই অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করা ২। রিসার্চ, পাব্লিকেশন, র‍্যাঙ্কিং দেখে সিলেক্ট করা। 

প্রথমটি সম্পর্কে বিস্তারিত ফেসবুকের হায়ার স্টাডি গ্রুপে সহ ইন্টারনেটে হাজার হাজার রিসোর্স আছে। আমি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে করেছিলাম, সেটা সম্পর্কে কিছু বলতে পারি। 

১। নিজের রিসার্চ ইন্টারেস্টে কোন ইউনিভার্সিটিগুলো বিগত ৫/৭ বছরে সবচেয়ে বেশী পেপার পাবলিশ করেছে সেটার লিস্ট বের করা। বেশী আগের সময় হিশেবে নিলে দেখা যায় অনেক প্রফেসর আর এখন ওই ভার্সিটিতে নাই। 
২। এরপর ভার্সিটিগুলার সাইটে গিয়ে রিকোয়ারমেন্টস দেখে নিজের সাথে ম্যাচ করে ফিলটার করা।

উদাহরণমূলক সার্চ লিঙ্কসঃ
বিগত ৫ বছরে শুধু নর্থ আমেরিকাতে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এ পাবলিকেশন লিস্টঃ  http://academic.research.microsoft.com/RankList?entitytype=7&topdomainid=2&subdomainid=9&last=5&continentid=2

সব সময়ের হিশেবে, সব কন্টিনেন্ট মিলিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পাবলিকেশন লিস্টঃ
http://academic.research.microsoft.com/RankList?entitytype=7&topdomainid=2&subdomainid=0&last=0&continentid=0

এছাড়া কোন স্টেট পছন্দ থাকলে সেইভাবেও সার্চ করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, নিজের রিসার্চ ইন্টারেস্টের সাথে ভার্সিটি ম্যাচ করাই আসল, র‍্যাঙ্কিং অতটা গুরুত্বপূর্ণ না। ইউএসএর বেশীরভাগ ভার্সিটিই বেশ ভালো কোয়ালিটি মেইন্টেইন করে। 

প্রোফাইলের সাথে ম্যাচ করে তিন ধরণের ভার্সিটি সিলেক্ট করা যায়। ১। অ্যাম্বিশাস (অ্যাডমিশন না হবার চান্সই বেশী) ২। মডারেট(হতেও পারে, নাও) ৩। সেইফ(হবে বলা যায়) । যদি মোট ৫ টা ইউনিতে অ্যাপ্লাই করা চিন্তা করে থাকেন, তাহলে সাধারণত সবাই বলে থাকে যে একটা অ্যাম্বিশাস, আর দুইটা করে মডারেট ও সেইফ এ অ্যাপ্লাই করতে। কিন্তু আল্টিমেটলি দেখা যায় অ্যাম্বিশাস গুলো থেকে রিজেকশনই আসে। আবার ইদানিং দেখা গেছে সেফ ইউনিভার্সিটিও হাই প্রোফাইল স্টুডেন্টদের অ্যাডমিশন দেয় না। কারণ সেই স্টুডেন্টগুলার অন্য যায়গায় হয়ে গেলে সেইফগুলাতে আর যায়না। শুধু শুধু ওদের অনেকখানি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসেসিং এর হ্যাপা নিতে হয়। আমি অন্তত দুটি কেইসের কথা জানি যেখানে এরকম হয়েছে। তাই আমার মনে হয় মডারেট ইউনির সংখ্যা বাড়ানো ভালো সেইফের চেয়ে। 

তাছাড়া কিছু যায়গায় যদি দেখেন ডিপার্টমেন্টে নতুন ফ্যাকাল্টি জয়েন করেছে, সেখানে নক দিয়ে দেখতে পারেন। সাধারণত নতুন জয়েন করা প্রফেসররা স্টার্টআপ ফান্ড হিশেবে কিছু টেকাটুকা পেয়ে থাকেন। এজন্য ভার্সিটিগুলার নিউজফীডে নজর রাখা ভালো কাজ। 

প্রোফেসরদের মেইল করে অ্যাপ্লাই করার অনেক সুবিধা আছে। খরচ কম, পজিটিভ রিপ্লাই হলে নিশ্চয়তা বেশী। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, প্রোফেসর খোঁজা ভার্সিটি খোঁজার চেয়ে বেশী সুবিধাজনক না। তাছাড়া মাসের পর মাস রিপ্লাইএর অপেক্ষায় বসে থাকতে গেলে অ্যাপ্লাই করার প্রায়োরিটি ডেডলাইন মিস হয়ে যাবার চান্স থাকে। সেজন্য যদি অনেক আগে এই প্রসেস শুরু করতে পারেন, তাহলে প্রোফেসর দের মেইল করেই শুরু করুন। আর হাতে সময় না থাকলে আল্লার নামে ভার্সিটি চয়েস করে অ্যাপ্লাই করে দিন। বাকিটা মহান অ্যাডমিশন কমিটির হাতে।

আরেকটা বিষয়, প্রোফেসরদের মেইল করার সময় বেশী প্রায়োরিটি দেবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসরদের, তারপর অ্যাসোসিয়েট। ফুল প্রোফেসররা বুড়ো হয়ে থাকেন। কাজেই তাদের নক করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে তারা এখনও রিসার্চে অ্যাক্টিভ। লেকচারারদের পকেট ফাঁকা থাকে, নক করে ফায়দার সম্ভাবনা কম।

পর্ব ৫ - স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) / রিসার্চ প্রোপোজাল/ পার্সোনাল স্টেটমেন্ট

কোথাও শুনেছি এটি অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আবার কোথাও উল্টোও শুনেছি। যাই হোক, আমার মতে প্রথমটাই সঠিক। অ্যাডমিশন কমিটির কাছে, এটাই আপনার চিন্তাভাবনার প্রতিচ্ছবি। অন্যান্য এক্সাম স্কোর এর নাম্বারগুলো আপনাকে যতটা প্রকাশ করবে, এই একটি লেখা তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশী প্রকাশ করবে। মনে রাখবেন, আপনার SOP দুনিয়ার ইতিহাসে এক পীসই লেখা হবে। এটিই বাদশাহের কাছে বলা আপনার আরব্য রজনীর গল্প। খারাপ হলে আপনি শ্যাষ।

অন্তত দুইমাস সময় হাতে নিয়ে শুরু করুন এটি লেখা। দয়া করে কারো কাছে থেকে কপি করবেন না। ইন্টারনেট ঘাটলে কোটিখানেক লিঙ্ক পাওয়া যাবে SOP লেখার পরামর্শ নিয়ে। আমি উপকার পেয়েছিলাম এমন কিছু লিঙ্ক নিচে দেইঃ 


এটাকে কোনভাবেই হাল্কাভাবে নেবেন না। অল্প সময়ে লেখার কথা ভূলেও মাথায় আনবেন না। উপরের লিঙ্কগুলো থেকে এটা কী, কেন, কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নিন। প্রচুর ঘাটাঘাটি করুন। পরিকল্পনা করুন। আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট ঠিক করুন। আউটলাইন লিখুন। কি কি বিষয় আপনি জানেন রিসার্চ টপিকে, সেগুলো পয়েন্ট আউট করুন। আপনার অতীত কীভাবে আপনাকে এই ফিল্ডে এনেছে সেটা কল্পনা করুন। "ছুডকাল থিকাই আমি মেশিন লার্নিং এর স্বপণ দেখি" টাইপের বক্তব্য পরিহার করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে স্বপ্ন, আশা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরণের ছেলেমানুষী বক্তব্য না থাকে, ম্যাচিউরিটি দেখান। থাকবে আপনার লজিকাল চিন্তাভাবনা, প্রকাশ পাবে আপনার লেগে থাকার অমানুষিক ক্ষমতা। কোন লাইনে যদি কোন ক্লেইম থাকে তার স্বপক্ষে এভিডেন্স দিন। রিসার্চ লাইনের প্রোফেসরদের বর্তমান কাজ সম্পর্কে ধারণা নিন। আপনার রিসার্চ কীভাবে এই ফিল্ডে অবদান রাখবে লক্ষ্য করুন। 


বারবার এডিট করুন। প্রচুর জিআরই শব্দ ঢুকিয়ে, জবরজং সেন্টেন্স বানিয়ে 'পার্ট' নেওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। ওই শব্দগুলো যে আপনি জানেন, সেটা অ্যাডমিশন কমিটিও জানে। সেজন্যই আপনি জিআরই ভার্বাল দিয়েছেন। এখানে সেটা পরিহার করুন। কল্পনা করুন, আপনি অ্যাডমিশন কমিটির সদস্য। কয়েক হাজার অ্যাপ্লিকেশনের কয়েক হাজার SOP আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যে রিভিও করতে হবে, এর মধ্যে যদি আকর্ষণীয় একটি গল্পের বদলে জিআরই ভার্বাল থাকে, আপনার কেমন লাগবে? 

এর কোন নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই। তবে মোটামুটি যেসব বিষয় থাকে সেগুলো ওই লিঙ্কগুলো ঘাটলেই পেয়ে যাবেন। মোটামুটি খসড়া বানিয়ে ফেলে ৪/৫ দিন পর পর এডিট করুন, আস্তে আস্তে একটা চেহারা দাঁড়িয়ে যাবে। এটা মোটেও সহজ কাজ না। যদি আপনার কাছে সহজ মনে হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার SOP ভালো কিছু হচ্ছেনা। এই জিনিসটা লেখার মধ্যে এতো বেশী "ডু'স এন্ড ডোন্ট'স" আছে যে আপনি একসময় হতাশ হয়ে যাবেন এবং 'ধুত্তুরি' বলে ফেসবুকে ঢুকে পড়বেন। তখন আসলে আপনি সঠিক পথেই আছেন। শুধু আবার ওটাকে বের করে এডিট করতে ভুলবেন না। 

কোথাও কোথাও এমন কথাও শুনবেন যে, তুমি যদি একটি SOP না লিখতে পারো তাহলে তোমার PhD করারই দরকার নেই। হতাশ হবেন না, আপনি একটি ভালো SOP লেখার পর এত অহমিকা অনুভব করবেন যে আপনার কাছে ওই বক্তব্য সঠিকই মনে হবে। 

SOP র একটা পার্টে লিখতে হয় ওই ইউনিভার্সিটি আপনি কেন সিলেক্ট করেছেন। সেখানে গণহারে ক্যাম্পাসের সবুজ-শ্যামলিমার কথা না বলে ভার্সিটি সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ-খবর নিন। একেবারে ডিপার্টমেন্টের সাইটে গিয়ে, প্রজেক্ট ডিটেইলস এ গিয়ে তাদের অ্যাক্টিভিটি পড়ে আসুন। সেটার একদম স্পেসিফিকালি কোন জায়গাটি আপনার আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এবং আপনার সেখানে অবদান রাখার কী সুযোগ রয়েছে সেটা তুলে ধরুণ। যে প্রফেসর এর নাম পটেনশিয়াল অ্যাডভাইজর হিশেবে দেবেন, তাদের ব্যক্তিগত সাইটে যান। কাজকর্ম দেখুন, আপনার ইন্টারেস্ট এর সাথে ম্যাচ করে এমন কিছু প্রোজেক্ট খুঁজে বের করুন। এরপর তাদের নামোল্লেখের সময় ওই প্রোজেক্টগুলোর কথাও উল্লেখ করে দিতে পারেন। মূলকথা হচ্ছে, আপনি যে এই ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে আসলেই ইন্টারেস্টেড এবং যথেষ্ট ঘাটাঘাটি করেছেন সেটা অ্যাডমিশন কমিটিকে বোঝান। 

সর্বোপরি, যতভাবে আপনার SOP সুন্দর করা সম্ভব বলে মনে হয়, ততভাবেই চেষ্টা করুন। লেখা শেষ হলে টিচারদের বা অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে রিভিও করে নিতে পারেন, তাদের সাজেশন মূল্যবান। অন্যের চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়বে যেটা আপনার চোখে নাও পড়তে পারে। গ্রামারে যাতে তিলমাত্র ভুল না থাকে। 

কোন কিছুই কখনো পারফেক্ট হয় না। SOP যাতে এর কাছাকাছির চেয়েও বেশী হয়। বাকীটা মহান অ্যাডমিশন কমিটির হাতে। 

পর্ব ৪ - টোফেল

ভার্সিটিগুলো আলাদা করে টোফেল চায়, এরকম না। ওরা চায় একটি ইংলিশ প্রোফিসিয়েন্সি স্কোর। সেটা টোফেল, আইইএলটিএস বা আরো দুয়েক রকমের হতে পারে। তাই এদুটোর একটা হলেই হয়।

এর ফরম্যাট সম্পর্কেও বিস্তারিত ও গভীর জ্ঞান থাকা লাগে। জিআরই প্রস্তুতি ভালো নেয়া থাকলে এর রিডিং আর রাইটিং সেকশন মোটামুটি আয়ত্তে থাকে। তবে লিসনিং আর স্পীকিং এর পাশাপাশি এদুটোর প্রস্তুতিও নিতে হবে। টানা প্রস্তুতি নিতে পারলে দুই মাসের মধ্যেই ১০০+ পাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। ফেসবুকের হায়ার স্টাডি গ্রুপের টোফেল-আইইএলটিএস সাবডিভিশনে প্রচুর রিসোর্স আছে। সেখানকার ফাইলস সেকশনটা এক্সপ্লোর করা ভালো। এছাড়া ইউটিউবে Notefull টোফেল চ্যানেলটা খুবই ভালো। এর লোকটা যা বলে তা চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করার মতো। ইটিএস অফিশিয়ালি কিছু টিপস ভিডিও ইউটিউবে দিয়ে রেখেছে Inside Toefl নামে TOEFLtv চ্যানেলে। আর আমার কাছে কিছু রিসোর্স আছে এক ভাইয়ের কম্পাইল করা। কেউ চাইলে মেইল করে দিতে পারি। BBC Learning English লিঙ্কটাও খুবই ভালো। এছাড়া টরেন্ট সাইট গুলোতে TOEFL লিখে সার্চ দিলে অনেক লিঙ্ক পাওয়া যায়। যেমনঃ http://katproxy.com/usearch/toefl/ .

স্পীকিং এর ক্ষেত্রে পার্টনার পাওয়া না পাওয়ার উপর নির্ভর না করে যদি নিজে প্র্যাকটিস করতে চান সেটাও সম্ভব। প্রথমে যেকোনো প্যাসেজ উচ্চারণ করে পড়া এবং সেটা রেকর্ড করে শোনা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতে নিজের উচ্চারণ কেমন হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যদিও প্রথম প্রথম নিজের ইংরেজী নিজে শুনতে একটু অদ্ভুতই লাগে। যাই হোক, এরপর যেকোনো র‍্যান্ডম টপিক নিয়েও ৪/৫ মিনিট টানা কথা বলে বলে রেকর্ড করে শোনা যায়। আয়নার সামনে নিজের সাথে কথা বলাও ভালো। আর আমরা বেশীরভাগ সময়ই ইংলিশে কথা বলার সময় মনে মনে আগে বাংলা বলি, পরে সেটাকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে বলি। এটার চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, ইংলিশেই চিন্তা করার চেষ্টা করা। অদ্ভুত শোনালেও এটা সম্ভব। রাস্তা দিয়ে হাটার সময় অনেক কিছুই আমরা চিন্তা করি, চেষ্টা করতে হবে যাতে সেগুলো ইংলিশে হয়। এতে ফ্লুয়েন্সি বাড়ে। তারপরও স্পীকিং এ ভালো পার্টনার পাওয়া গেলে খুব ভাল প্রস্তুতি হয়।

মনে রাখতে হবে যে, পরীক্ষার সময় স্পীকিং এর সেকশনে এক্সাম সেন্টারে পুরো মাছের বাজার বসে যায়। সবাই চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করে। তখন কন্সেন্ট্রেশন ধরে রাখার প্র্যাক্টিস হিশেবে উচ্চশব্দে মুভি চালিয়ে দিয়ে স্পীকিং প্র্যাকটিস করা যায়। আসলে না চিল্লিয়ে উপায়ও নেই। যদি মাইক্রোফোন আপনার উত্তর রেকর্ড না করতে পারে অল্প শব্দের কারণে, বা ইটিএস ঠিকমত মূল্যায়ন করতে না পারে তাহলে আপনার স্কোরই আসবেনা।

টোফেল স্কোর ১০০+ রাখা জরুরী। এটি কোন ধরণের কাট-অফ থেকে বাঁচিয়ে রাখা ছাড়াও অ্যাসিস্টান্টশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার কোন সেকশন যাতে একেবারে খারাপ না হয়ে যায়। তাহলে পুরো স্কোরই মাঠে মারা যাবে।

আর টোফেল স্কোর ফ্রী পাঠানোর যে অপশন থাকে সেটা সম্ভবত পরীক্ষার আগেই পাঠাতে হয়। জিআরইতে পরীক্ষার পরে।

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

পর্ব ১ - নিঃস্বার্থ উচ্চশিক্ষা, What is Sacrifice?

অনার্স কমপ্লিট, মাস্টার্স করমুনা। পড়াশুনা শেষ। এইবার চাকরীর জন্য দৌড়। আর যদি আগে মনে হয় যে মাস্টার্স/এমবিএ করলে আরেকটু ভালো চাকরী পাওয়া যাবে তাহলে তাই সই। অতঃপর ভালো-মন্দ একটা চাকরী পেয়ে মিষ্টি বিলিয়ে, বিয়ে করে, মা-বাবা, দাদা-দাদী হয়ে আজিমপুর বা বনানী। শেষ। ৬০ বছরের জীবনে এইটুকুই অনেক। কী লাভ জ্ঞানের পেছনে দৌড়ে? ছোটবেলায় কত কিছুই তো জানতে, দেখতে, বুঝতে ইচ্ছা করত। এখন বড় হইছি, এইসব জ্ঞান-টান দিয়ে যে কোন লাভ নাই সেটা বোঝার মত বুদ্ধি হইছে।

এই হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা। কোথায় যেন পড়েছিলাম যে "Life is too short not to take risks". নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট একটি জীবন কে না চায়। কিন্তু ওইটুকু রিস্ক নেওয়া, আরেকটু দুরে যাওয়া, একটি নতুন দেশ দেখা, একটি নতুন জিনিস জানা, এমনকি একটা কিছু আবিষ্কার করা, খারাপ কিছু কি? একটাই তো জীবন, একটু ভিন্ন নাহয় হলই, মহাভারত অবিকৃতই থাকবে।

এইসব দার্শনিক আলাপ বাদ দিলাম। উচ্চশিক্ষার পেছনে ছুটলে বাস্তব জীবনে ফায়দা কতটুকু? দেশে চাকুরীর বাজার খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। বিসিএস নাটকে কোটা নামের হাস্যরস, বছরের পর বছর প্রস্তুতি নেওয়া ছেলেদের কাছে তিক্ত লাগে। এফএইচ হলে থাকতে ভাইদের দেখেছি, দুই-তিন বছর টানা প্রস্তুতির পর ভাইভাতে বাদ পরে আবার দেড় বছরের ফ্যাকড়ায় পড়ে যেতে, ব্যাঙ্কগুলোতে অনেক কষ্ট করেও হাস্যকর বেতনে ঢুকতে।
আইটি/সিএস এর ছাত্রদের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে একটু ভালো। এখানে চাকরি পাওয়া, পরিবর্তন, বেতনাদি সামান্য ভালো। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কয়েক বছর যাওয়ার পর এখানে উন্নতির সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। বেতন অত বাড়েনা, বুড়ো বয়সেও সারাদিন প্রেশারে কাজ করা লাগে, আর কোম্পানি খারাপ হলে তো কথাই নেই। পেনশনবিহীন, অনিরাপদ বেসরকারী চাকুরীতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা এবং মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া দুটোই কষ্টকর।

হুমায়ুন আজাদের মতে, বাংলাদেশে বেতন কাঠামো একটি রসিকতা মাত্র, এখানে ৩০ দিন কাজ করিয়ে ৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়। ঢাকায় বাসা ভাড়া, যাতায়াত, খাওয়া-খরচ চিকিৎসা, পড়াশুনা আর অতিরিক্ত খরচ হিশেবে নিলে মাস শেষে যদি রাখা যায়ও, খুব বেশী থাকেনা মাটির ব্যাঙ্কে রাখার মতো। সদ্য পাশ করে এইসব চাকুরী ভালোই লাগে, পরে পরিবারের আর নিজের ভবিষ্যতের হিশেব আসতে থাকলে প্রাথমিক অনুভূতিটা আর থাকেনা।

এর বিকল্প হিশেবে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশগমনের প্রশ্ন আসার যোগ্য। যদিও দেড় বছর খাওয়া-ঘুম হারাম করে স্কলারশীপের পর পরিবার-বন্ধুদের ছেড়ে আবার দুই বা পাঁচ বছর বা হয়ত আজীবনের জন্যই ভিনদেশে পড়ে থাকা সুখের কিছু না, তবু নিজের এবং পরিবারের একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় কয়েক বছরের আত্মত্যাগ করা যায়। দেশে এরকম উচ্চশিক্ষিত যুবকরা থাকলে দেশের চেহারাও পালটে যাবে। অনেক বছর পর হয়ত আর এভাবে বাইরেও যাওয়া লাগবে না, আশা করি তখন বাইরে থেকে উচ্চশিক্ষার্থে আমাদের দেশে লোকজন আসবে। ততদিন আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে।